কানাডায় IELTS ছাড়াই স্কলারশিপ; উচ্চশিক্ষার নতুন গন্তব্য চীন-জাপান, তুরস্ক, কোরিয়া ও জার্মানি
যেসব দেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, বন্ধুসুলভ পরিবেশ ও বিশ্বখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য পরিচিতি সেসব দেশের মধ্যে কানাডা অন্যতম। প্রতিবছর কয়েক হাজার শিক্ষার্থী কানাডায় পাড়ি দেয় উচ্চশিক্ষা অর্জন এবং অভিবাসী হওয়ার উদ্দেশ্যে।
অন্যান্য দেশের মতো কানাডার বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইইএলটিএস বা অন্যান্য ভাষাগত দক্ষতার পরীক্ষায় ভালো ফলাফল থাকা আবশ্যকীয় শর্ত থাকে। তবে দেশটির নামকরা ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণের পথ সুগম করতে আইইএলটিএস ছাড়াই স্কলারশিপ অফার করে থাকে।

How to Apply Online (2023-2024) for; LIVE, WORK AND STUDY IN CANADA
Canada is the top most welcoming countries for Students from around the world. Living, working and studying in Canada is a dream for many people. However, you have already been able to make it happen and […]
কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়
কানাডার অটোয়াতে অবস্থিত কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ২০০টিরও বেশি প্রোগ্রাম, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি কানাডার অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বতন্ত্র। বিশ্ববিদ্যালয়টি ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের এনট্রান্স স্কলারশিপ প্রোগ্রামে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও গ্র্যাজুয়েটের আওতায় বছরে ১ হাজার থেকে ১৬ হাজার কানাডিয়ান ডলার পর্যন্ত ফান্ড দেয়। এই স্কলারশিপে ভাষাগত দক্ষতার পরীক্ষা বা আইইএলটিএসের ফলাফলের প্রয়োজন পড়ে না।
বিষয়ভিত্তিক প্রোগ্রাম
কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত, বিজ্ঞান, সঙ্গীত, কম্পিউটার সায়েন্স, পাবলিক অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড পলিসি ম্যানেজমেন্ট, সোশ্যাল ওয়ার্ক, মিডিয়া প্রোডাকশন অ্যান্ড ডিজাইন, সাংবাদিকতা ও মানবিক, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস, অর্থনীতি, ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফরমেশন টেকনোলজি, গ্লোবাল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ, হেলথ সায়েন্স, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ, ব্যবসায়, কগনিটিভ সায়েন্স, এগ্রিকালচারাল স্টাডিজ, ব্যাচেলর অব আর্টস প্রোগ্রামে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।
আবেদনের যোগ্যতা
অবশ্যই ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থী হতে হবে।
আন্ডারগ্র্যাজুয়েট হলে একাডেমিক ফলাফল কমপক্ষে গড়ে ৮০ শতাংশ এবং গ্র্যাজুয়েট হলে ১০ থেকে ১২ থাকতে হবে (সিজিপিএ হিসেবে)।
ফুল টাইম আন্ডারগ্র্যাজুয়েট বা গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে হবে।
আবেদন প্রক্রিয়া

2023-2024 CANADA Visa – Application and Complete Guidelines: Apply Online Now
Canada is a country in the North American continent located right above the United States and is known as a highly developed country. The demand for people to travel to Canada has been steadily increasing […]
স্কলারশিপের জন্য ভিন্ন কোনো আবেদনপত্রের প্রয়োজন নেই। আবেদনকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক আবেদন এবং ডকুমেন্ট জমা দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্কলারশিপের জন্য মনোনীত হবে। এ ক্ষেত্রে ফল টার্মের জন্য ১লা মার্চ এবং উইন্টার টার্মের জন্য ১৫ নভেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে হবে।
আবেদন বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করতে পারেন
কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
কানাডার মন্ট্রিলের কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে খ্যাত। এখানে রয়েছে ৫০০টিরও বেশি প্রোগ্রাম। যার মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের জন্য ১০০টির বেশি আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও ১০০টির বেশি গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ অফার করে থাকে। যার মধ্যে অসাধারণ একাডেমিক ফলাফলধারী ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের জন্য এক্সিলেন্স অ্যান্ড ডিস্টিঙ্কশন স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি কভার করার পাশাপাশি এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের জন্য উপবৃত্তির সুবিধা প্রদান করে। এই স্কলারশিপের জন্য ভাষাগত দক্ষতা পরীক্ষার প্রয়োজন নেই।
বিষয়ভিত্তিক প্রোগ্রাম
আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে জীববিজ্ঞান, গণিত, রসায়ন, ইতিহাস, দর্শন, ব্যবসায় প্রশাসন, কম্পিউটার প্রকৌশল, কম্পিউটার বিজ্ঞান, যোগাযোগ, অর্থনীতি, ইংরেজি, ফিন্যান্স, ডিজাইন, মানবিক, সাংবাদিকতা, ব্যবস্থাপনা, পদার্থবিদ্যা ইত্যাদি বিষয়ে পড়া যাবে।
আবেদনের যোগ্যতা
অবশ্যই ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থী হতে হবে।
একাডেমিক ফলাফল কমপক্ষে গড়ে ৮০ শতাংশ থাকতে হবে (সিজিপিএ হিসেবে)।
কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট বা গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে হবে।
আবেদন প্রক্রিয়া

How to Apply for 2023-2024 Global Jobs
How to Apply for 2023-2024 Global Jobs Searching for and applying to jobs abroad can be an intimidating task. Here are 4 useful steps to follow in order to find and secure work abroad. By Colin […]
আবেদনকারী কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্কলারশিপের জন্য মনোনীত হবে। স্কলারশিপের জন্য ভিন্ন কোনো আবেদনপত্রের প্রয়োজন নেই। পরবর্তীতে নির্দেশনা মোতাবেক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ফল টার্মের জন্য ১লা মার্চ এবং উইন্টার টার্মের জন্য ১লা নভেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে হবে।
এখানে আবেদনের বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে
ইউনিভার্সিটি অব উইনিপেগ
কানাডার ইউনিভার্সিটি অব উইনিপেগ পাবলিক গবেষণাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। অন্যান্য সুবিধার পাশাপাশি এখানে শিক্ষার্থীদের অ্যাওয়ার্ড, বৃত্তি, স্কলারশিপ, পুরস্কারের মাধ্যমে একাডেমিক সফলতার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। যার মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে যেকোনো আন্ডারগ্র্যাজুয়েট, গ্র্যাজুয়েট বা ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ প্রোগ্রামে কানাডার ইউনিভার্সিটি অব উইনিপেগ প্রেসিডেন্ট স্কলারশিপ ফর ওয়ার্ল্ড লিডারস নামে স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। এই স্কলারশিপের জন্য ভাষাগত দক্ষতার পরীক্ষার প্রয়োজন নেই এবং এটি টিউশন ফি কভার করার পাশাপাশি থাকার খরচ বহনের জন্য ফান্ড দেয়।
বিষয়ভিত্তিক প্রোগ্রাম
ইউনিভার্সিটি অব উইনিপেগ আর্টস, বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকস, এডুকেশন, সায়েন্স, কিনেসিওলোজি অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড হেলথ- এই ৫টি অনুষদে ৩-৪ বছর মেয়াদে অনার্স ব্যাচেলর প্রোগ্রাম অফার করে। এ ছাড়া অ্যাপ্লাইড অ্যান্ড জয়েন্ট প্রোগ্রাম এবং প্রি-প্রফেশনাল স্ট্রিমে মেডিসিন, আইন, ডেন্টিস্ট্রি অ্যান্ড অপটোমেট্রি বিষয়ে অধ্যয়নের সুযোগ দেয়।
আবেদনের যোগ্যতা
অবশ্যই ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থী হতে হবে।
একাডেমিক ফলাফল কমপক্ষে গড়ে ৮০ শতাংশ থাকতে হবে (সিজিপিএ হিসেবে)।
ইউনিভার্সিটি অব উইনিপেগে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট, গ্র্যাজুয়েট বা ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে হবে।
আবেদন প্রক্রিয়া
আবেদনকারীকে ইউনিভার্সিটি অব উইনপেগের আবেদনপত্র পূরণ করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে। প্রেসিডেন্ট স্কলারশিপ ফর ওয়ার্ল্ড লিডারস স্কলারশিপের জন্য আলাদা আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে এবং নির্দেশনা মোতাবেক রচনা ও রেফারেন্স লেটার জমা দিতে হবে। আবেদনের শেষ সময় ১লা জুন।
আবেদনের যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে জানা যাবে এখানে
ইউনিভার্সিটি অব সাসকাচেওয়ান
কানাডার ইউনিভার্সিটি অব সাসকাচেওয়ান বিশ্ব নেতৃত্বে আলাদা জায়গা দখল করে আছে। বিশ্বের নানা অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে এই বিশ্ববিদ্যালয় রেখেছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের জন্য যেকোনো আন্ডারগ্র্যাজুয়েট, গ্র্যাজুয়েট বা গবেষণাভিত্তিক প্রোগ্রামে এই বিশ্ববিদ্যালয় ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাওয়ার্ড নামে স্কলারশিপ প্রদান করে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ভালো একাডেমিক ফলাফল থাকতে হবে এবং ভাষাগত দক্ষতার পরীক্ষার স্কোর প্রয়োজন পড়বে না।
বিষয়ভিত্তিক প্রোগ্রাম
ইউনিভার্সিটি অব সাসকাচেওয়ানে হিসাববিজ্ঞান, অ্যাডভান্সড ভেটেরিনারি অ্যান্ড ডায়াগনিস্টিক প্যাথলজি, এগ্রিকালচারাল ইকোনমিকস, অ্যানাটমি, ফিজিওলজি অ্যান্ড ফার্মাকোলজি, অ্যানিমেল অ্যান্ড পোল্ট্রি সায়েন্স, নৃবিজ্ঞান, অ্যাপ্লাইড কম্পিউটিং, অ্যাপ্লাইড ইকোনমিকস, অ্যাপ্লাইড মাইক্রোবায়োলজি, প্রত্নবিদ্যা, অর্থনীতি, আইন, জীববিজ্ঞান, ব্যবসায় প্রশাসন, রসায়ন, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স, ইংরেজি, ফিন্যান্স, মার্কেটিং, ভূতত্ত্ব, ইতিহাস, গণিত, দর্শন, মনোবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে পড়া যাবে।
আবেদনের যোগ্যতা
অবশ্যই ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থী হতে হবে।
একাডেমিক ফলাফল কমপক্ষে গড়ে ৮০ শতাংশ থাকতে হবে (সিজিপিএ হিসেবে)।
ইউনিভার্সিটি অব সাসকাচেওয়ানে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট, গ্র্যাজুয়েট বা গবেষণাভিত্তিক প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে হবে।
আবেদন প্রক্রিয়া
আবেদনকারীর ইউনিভার্সিটি অব সাসকাচেওয়ানের আবেদনপত্রের ওপর ভিত্তি করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্কলারশিপের জন্য বিবেচনা করায় ভিন্ন কোনো আবেদনপত্রের প্রয়োজন পড়ে না। এ ক্ষেত্রে ১লা ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে হবে।
আবেদনের জন্য অন্যান্য বিষয়াদি জানতে যেতে হবে এখানে
ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়া
ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়া কানাডার অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে বেশ অনন্য। বিশেষত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি এমবিএ প্রোগ্রামের জন্য খ্যাত। এখানকার আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের বেশিরভাগ প্রোগ্রামই সেরার তালিকায়। ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দক্ষতা ও একাডেমিক সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইন্টারন্যাশনাল লিডার অব টুমোরো অ্যাওয়ার্ড নামক স্কলারশিপ অফার করে। এতে ভাষাগত দক্ষতার পরীক্ষার দরকার হয় না। এটি টিউশন ফি কভারের পাশাপাশি জীবনযাত্রার ব্যয় বহনের জন্য ফান্ড দেয়।
বিষয়ভিত্তিক প্রোগ্রাম
আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকস, এডুকেশন, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, হেলথ অ্যান্ড লাইফ সায়েন্স, ইতিহাস, আইন ও রাজনীতি, গণিত, রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞান, ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড লিঙ্গুয়েস্টিকস, মিডিয়া অ্যান্ড ফাইন আর্টস, পিপল, কালচার অ্যান্ড সোসাইটি, আর্থ, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সাস্টেনেবিলিটি বিভাগে বিভিন্ন বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে।
আবেদনের যোগ্যতা
অবশ্যই ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থী হতে হবে।
একাডেমিক ফলাফল কমপক্ষে গড়ে ৮০ শতাংশ থাকতে হবে (সিজিপিএ হিসেবে)।
ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়ার আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে হবে।
আবেদন প্রক্রিয়া
আবেদনকারীকে ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়ার আবেদনপত্র পূরণ করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে। ইন্টারন্যাশনাল লিডার অব টুমোরো অ্যাওয়ার্ড স্কলারশিপের জন্য আলাদা আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে এবং নির্দেশনা মোতাবেক রচনা ও রেফারেন্স লেটার ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে জমা দিতে হবে।
আবেদন বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারেন এখানে
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার নতুন গন্তব্য কেন তুরস্ক, কোরিয়া ও জার্মানি
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এত দিন উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার মতো ইংরেজিভাষী দেশগুলোকে বেছে নিচ্ছিলেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চীন, জাপান, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া ও জার্মানির মতো ভিন্ন ভাষার দেশগুলোর প্রতিও আগ্রহী শিক্ষার্থীরা। কারণ হিসেবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, এসব দেশে ভাষাগত সমস্যা থাকলেও বৃত্তির (স্কলারশিপ) সুযোগ বেশি। টিউশন ফির সঙ্গে থাকা–খাওয়ার খরচও অপেক্ষাকৃত কম। আর পড়াশোনা শেষে অনেক দেশে কাজেরও সুযোগ থাকে। দেশগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক—
জাপান
উচ্চশিক্ষার জন্য একসময় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অন্যতম পছন্দের দেশ ছিল জাপান। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এ ধারা আরও বেড়েছে। জাপানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান, প্রকৌশল, সামাজিক বিজ্ঞান, মেডিকেল, সাহিত্য, ব্যবসা প্রশাসন, পরিবেশসহ যেকোনো বিষয়ে ডিগ্রি, স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। দেশটিতে স্নাতক ডিগ্রির মেয়াদ বিষয়ভেদে চার থেকে ছয় বছর। স্নাতকোত্তর ডিগ্রির মেয়াদ দুই বছর এবং পিএইচডি বিষয়ভেদে তিন থেকে চার বছর সময় লাগে। জাপানে শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের সুযোগ রয়েছে। স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ে স্কলারশিপের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি। মেক্সট স্কলারশিপ ছাড়া এডিবি-জাপান স্কলারশিপ, জাপান-বিশ্বব্যাংক বৃত্তি দেয় জাপান। এসব বৃত্তির আওতায় শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, ভর্তি ফি, থাকা-খাওয়া-যাতায়াতের খরচ, বই কেনা, হাতখরচ, চিকিৎসা ভাতা, এমনকি জাপানে আসার বিমানভাড়াও অন্তর্ভুক্ত থাকে অনেক সময়। স্কলারশিপ পেতে দেশটির সরকারি ওয়েবসাইট ও পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে নিয়মিত নজর রাখতে পারেন আগ্রহী শিক্ষার্থীরা। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা দেশটিতে সপ্তাহে সাধারণত ২৮ ঘণ্টার মতো কাজ করার সুযোগ পান। এ ক্ষেত্রে জাপানি ভাষা জানাটা জরুরি। স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ে ইংরেজি ভাষায় পাঠ্যক্রম থাকায় জাপানি ভাষা না জানলেও সমস্যা নেই। তবে স্নাতকের জন্য ভাষা শিখতেই হয়।
তুরস্কের সরকারি–বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের পড়ার সুযোগ রয়েছে। স্কলারশিপের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও টিউশন ফি, এক বছরের তুর্কি ভাষা কোর্স ফি, থাকা–খাওয়া, স্বাস্থ্যবিমা, মাসিক ভাতা, প্রথমবার যাওয়া ও পড়ালেখা শেষ করে দেশে ফেরার বিমান টিকিটের টাকা পাওয়া যায়।
চীন
উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থীর অন্যতম প্রিয় গন্তব্য এখন চীন। দেশটির শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পিকিং ইউনিভার্সিটি, ফুদান ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইন চায়না, ঝেজিয়াং ইউনিভার্সিটি এবং উহান ইউনিভার্সিটি। এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান ও প্রকৌশল, মেডিকেল, সমাজবিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা, কৃষিসহ অন্য বিষয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডির সুযোগ রয়েছে। প্রতিবছর চীন বিদেশি শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় চায়না স্কলারশিপ কাউন্সিল ও চায়না গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ। এ ছাড়া কনফুসিয়াস স্কলারশিপ, কাউন্সিল রোড অ্যান্ড বেল্ট স্কলারশিপ, মফকম স্কলারশিপ, কাস টাওয়াস স্কলারশিপ, ইউনিভার্সিটি প্রেসিডেনশিয়াল স্কলারশিপ, প্রভিন্সিয়াল স্কলারশিপ, এন্টারপ্রাইজ স্কলারশিপ, ইয়েস চায়না স্কলারশিপও আছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও কিছু স্কলারশিপ দেয়। এসব বৃত্তির আওতায় শিক্ষার্থীরা টিউশন ফি, হোস্টেল ফি, স্বাস্থ্যবিমা ও মাসিক ভাতা পেয়ে থাকেন।
চীনের হাতে গোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া চীনা ভাষা শেখাটা বাধ্যতামূলক নয়। সেখানকার স্নাতকোত্তর ও পরবর্তী পর্যায়ে ইংরেজি ভাষায় পড়ানো হয়। তবে জীবনযাপন সহজ করার জন্য চীনা ভাষা শেখা জরুরি। সাধারণত, প্রথম কাতারের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য আইইএলটিএস বা এইচএসকে (চীনা ভাষার দক্ষতা পরীক্ষা) দরকার হয়। তবে কেউ যদি ইংরেজি মাধ্যমে লেখাপড়া করে থাকেন, তাহলে এমওআই (মিডিয়াম অব ইনস্ট্রাকশন) সনদ দিয়ে আবেদন করা যাবে।
জার্মানি
উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় সবার ওপরে যুক্তরাজ্য। এরপরই জার্মানি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনির্দিষ্ট কিছু ডিগ্রি প্রোগ্রামে বিনা পয়সায় পড়ার সুযোগ পাওয়া যায়। আছে শিক্ষাবৃত্তির সুবিধাও। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির সামার সেশন এবং মে থেকে জুলাইয়ের উইন্টার সেশনে আবেদন জমা দেওয়ার পরামর্শ সেখানকার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের। স্কলারশিপ ছাড়া জার্মানিতে নিজ অর্থে পড়ালেখা করা ব্যয়বহুল। কাজ করার সুযোগ থাকায় অনেকে আংশিক স্কলারশিপ পেলেও জার্মানি পড়তে যান। শিক্ষার্থী হিসেবে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজের অনুমতি মেলে। এ ছাড়া গ্রীষ্মকালীন তিন মাস ছুটিতে এবং বছরে দুবার সেমিস্টার ব্রেকে ফুলটাইম কাজ করার সুযোগ আছে দেশটিতে। জার্মানরা ইংরেজিতে সাবলীল হলেও পার্টটাইম কাজ করার ক্ষেত্রে জার্মান ভাষা শিখতে হয় শিক্ষার্থীদের। দেশটিতে যেতে জার্মান ভাষা শেখা বাধ্যতামূলক নয়। তবে ভাষাটি জানা থাকলে ছোট-বড় যেকোনো শহরেই কাজ পাওয়া সহজ হয়।
তুরস্ক
উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে তুরস্কের নাম। এর বড় একটি কারণ, তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পড়ার খরচ তুলনামূলক কম। বৃত্তির সুযোগও বেশি। দেশটিতে সমাজবিজ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল, ব্যবসায় প্রশাসনের বিভিন্ন বিষয়, সেই সঙ্গে ইসলামের ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর, পিএইচডি ও রিসার্চ প্রোগ্রামের সুযোগ মেলে।
তুরস্কের সরকারি–বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের পড়ার সুযোগ রয়েছে। শিক্ষাবৃত্তি পেলে পড়ার খরচ কমে। স্কলারশিপের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও টিউশন ফি, এক বছরের তুর্কি ভাষা কোর্স ফি, থাকা–খাওয়া, স্বাস্থ্যবিমা, মাসিক ভাতা, প্রথমবার যাওয়া ও পড়ালেখা শেষ করে দেশে ফেরার বিমান টিকিটের টাকা পাওয়া যায়। মাস্টার্স ও পিএইচডির শিক্ষার্থীদের পরিবারসহ থাকার সুযোগ রয়েছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে। তুরস্কে বছরে সেপ্টেম্বর-ফেব্রুয়ারি সামার সেশন এবং মার্চ-জুন ফল সেশনে ভর্তি হওয়া যায়।
কোরিয়া
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি করার জন্য বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা দক্ষিণ কোরিয়াকে বেছে নিচ্ছেন। এর একটি কারণ হিসেবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে কোরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ওপরের দিকে। কিন্তু সে অনুযায়ী টিউশন ফি খুব বেশি নয়। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা থাকায় থাকা–খাওয়ার খরচ সীমিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেলে সাধারণত ইংরেজি ও কোরিয়ান—দুটি ভাষার দক্ষতার প্রমাণপত্র দেখাতে হয়। দক্ষিণ কোরিয়ায় স্নাতক ডিগ্রির মেয়াদ সাধারণত তিন থেকে চার বছর, স্নাতকোত্তর ডিগ্রির মেয়াদ এক থেকে দুই বছর এবং পিএইচডি ডিগ্রির মেয়াদ তিন থেকে পাঁচ বছর হয়ে থাকে।
এদিকে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা তাঁদের উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হিসেবে নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, ডেনমার্ক, রাশিয়া, ইউক্রেন, ফিনল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, সুইডেন, হাঙ্গেরি, স্পেন, চেক রিপাবলিক ইত্যাদি দেশকে বেছে নিচ্ছেন।